The Tragedy of Othello by William Shakespeare। Bangla Summary । TranslationBD । সম্পূর্ণ বাংলায়

Othello - The Tragedy of Othello, the Moor of Venice – William Shakespeare – Summary in Bengali, TranslationBD.com সম্পূর্ণ বাংলায়, with PDF

Othello - The Tragedy of Othello, the Moor of Venice – William Shakespeare – Summary in Bengali, TranslationBD.com সম্পূর্ণ বাংলায়, with PDF

 ওথেলো, দি মুর অফ ভেনিস

উইলিয়াম শেকসপিয়র

উইলিয়াম শেকসপিয়র (/ˈʃeɪkspɪər/; ইংরেজি: William Shakespeare উইলিয়াম্‌ শেইক্‌স্পিয়ার্‌; ব্যাপ্টিজম: ২৩ এপ্রিল, ১৫৬৪; মৃত্যু: ২৩ এপ্রিল, ১৬১৬) ছিলেন একজন ইংরেজ কবি ও নাট্যকার। তাকে ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের একজন অগ্রণী নাট্যকার মনে করা হয়। ... অ্যানির গর্ভে শেকসপিয়রের তিনটি সন্তান হয়েছিল।

আরো পড়ুন >

সাইপ্রাসের গভর্নর মনট্যানো খবর পেলেন যে তার দেশ আক্রমণ করতে সমুদ্রপথে এগিয়ে আসছে অটোমান তুর্কি নৌবাহিনী। খবর পেয়ে অস্থির হয়ে গেলেন তিনি। প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে লাগলেন চরম অশান্তির মাঝে। তাই আর দেরি না করে তিনি তার প্রভু ভেনিসের ডিউককে জানিয়ে দিলেন তুর্কি নৌবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের কথা।

মনট্যানোর প্রেরিত সংবাদ পেয়ে রাত দুপুরে সেনেটরদের এক জরুরি সভার আয়োজন করলেন ভেনিসের ডিউক। সাইপ্রাস দখল করতে দ্রুত এগিয়ে আসছে তুর্কি নৌবাহিনী। তারা নাকি ইতিমধ্যেই রোডস দ্বীপের কাছে পৌছে গেছে। এ সমস্ত সংবাদ শুনে আঁতকে উঠলেন সেনেটের সদস্যরা। কারণ তারা জানতেন তুর্কিরা যোদ্ধা হিসেবে দুর্ধর্ষ। জলে বা স্থলে, তাদের সাথে লড়াইয়ে টিকে থাকা দুষ্কর। তারা এও জানতেন জলযুদ্ধে পৃথিবীর সেরা ব্রিটিশ নৌবাহিনী পর্যন্ত লেজ গুটিয়ে সরে পড়ে যদি তারা দূর থেকে দেখতে পায় তুর্কি নৌবহরের জাহাজ।

সেনেটের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন ডিউক, এ বিপদে আমাদের একমাত্র আশা ভরসা সেনাপতি ওথেলো। কাজেই তুর্কি আক্রমণ রোধ করতে তাকেই নেতৃত্ব দিয়ে পাঠানো হোক সাইপ্রাসে। সেনেটের সবাই একবাক্যে সমর্থন করল ডিউকের প্রস্তাব! ডিউকের নির্দেশে তার সৈন্যেরা তখনই রওনা হল ওথেলোকে সংবাদ দিতে। 

ভেনিসের অধিবাসী হলেও ওথেলো কিন্তু আর সবার মতো সাদা চামড়ার লোক নন, তার গায়ের রং কালো। আফ্রিকার মরক্কোতে তার দেশ। তিনি জাতিতে মুর। যৌবনে তিনি ভাগ্যান্বেষণে এসেছিলেন ভেনিসে। সেখানেই গ্রহণ করেন সৈনিকের পেশা। বহু লড়াইয়ে নিজের সাহস আর রণকৌশলের স্বাক্ষর রেখে জীবনে বহু উন্নতি করেছেন তিনি। তাই বিদেশি হয়েও সেনাপতির পদ পেতে কোনও অসুবিধে হয়নি তার।

ডিউকের সৈন্যরা ছাড়াও সে সময় আরও কিছু লোক খুঁজে বেড়াচ্ছিল ওথেলোকে। তাদের মধ্যে ছিলেন সেনেটের অন্যতম সদস্য ব্রাবনশিও আর তার পরিচিত কিছু লোক। ওথেলোকে এত রাতে খুঁজে বেড়াবার কারণ একটাই --- কিছুক্ষণ আগে ব্রাবনশিও জানতে পেরেছেন যে তার পরমাসুন্দরী কন্যা ডেসডিমোনা কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। তারপর সবার নজর এড়িয়ে শহরের কোনও এক জায়গায় গোপনে বিয়ে করেছে ভেনিসের প্রধান সেনাপতি ওথেলোকে। সেনাবাহিনীর এক পদস্থ অফিসারই কে এ খবরটা দিয়েছেন -- তার নাম ইয়াগো। ব্রাবানশিওর কানে খবরটা তুলে দেবার সময় ইয়াগোর সাথে ছিল ভেনিসের এক ধনীর অপদার্থ পূত্র রডরিগো।

খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি সেনেটর ব্রাবানশিও। কিন্তু যখন খোঁজ নিয়ে জানলেন যে সত্যিই ডেসডিমোনা বাড়িতে নেই, স্বাভাবিক ভাবেই তখন তার মনে সন্দেহ হল। তিনি ভেবে দেখলেন ইয়াগোর দেওয়া খবর সত্যি হলেও হতে পারে। তিনি লক্ষ করেছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে ওথেলো প্রায়ই তার বাড়িতে আসছেন। ওথেলো নামি লোক, দেশের প্রধান সেনাপতি। তার মতো লোক বাড়িতে আসায় খুবই গর্ববোধ করতেন ব্রাবানশিও। আর ডেসডিমোনাও যে ওথেলোকে খুব পছন্দ করে, সেটাও তার নজর এড়ায়নি। ওথেলো আসার খবর পেলে যেখানেই থাক ডেসডিমোনা এসে হাজির হত, ওথেলোকে নিয়ে যেত তার নিজের মহলে। ওথেলোর জীবনের নানা রোমাঞ্চকর কাহিনি শোনানোর জন্য আবদার করত তার কাছে। বীরপুরুষদের মুখ থেকে তাদের জীবনের রোমাঞ্চকর কাহিনি শোনার জন্য অল্পবয়সি মেয়েরা খুবই উৎসুক হয় - সেজন্য এর মধ্যে দোষণীয় কিছু খুঁজে পাননি ব্রাবানশিও। কিন্তু নিরালায় পরস্পরের মাঝে কথাবার্তার সুবাদে যে প্রেম-ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল তা আজই টের পেলেন ব্রাবানশিও। তারই সমাপ্তি আজ এই গোপন বিয়ের অনুষ্ঠানে।  যত মানী লোকই হোন না কেন ওথেলো, ডেসডিমোনার সাথে তার বিয়েটা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না ব্রাবানশিও। একে তো ওথেলো বিধর্মী ও বিদেশি, আর ডেসডিমোনা তার মেয়ের সমান। এক্ষেত্রে কিছুতেই তাদের বিয়েটাকে মেনে নিতে পারেন না তিনি। ডেসডিমোনাকে ওথেলোর হাত থেকে উদ্ধার করে আনতে নিজেই লোকজন জোগাড় করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি।  দুটি দলই কিছুক্ষণ বাদে খুঁজে পেল ওথেলোকে। ডিউকের সৈন্যরা জানাল যে একটা বিশেষ কাজে রাত-দুপুরে তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন ডিউক। আর ব্রাবানশিও বললেন বাড়ি থেকে তার মেয়ে ডেসডিমোনাকে ফুসলিয়ে আনার অভিযোগে আজ রাতেই তিনি আদালতে হাজির করবেন ওথেলোকে।

এদিকে ওথেলোর নিজস্ব লোকজনও কম ছিল না। তারা সবাই বলল, ডিউক এমনিই ডেকে পাঠিয়েছেন তাকে। ওথেলোর বিরুদ্ধে যদি সত্যিই ব্রাবানশিওর কোনও অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে তিনি তো অনায়াসেই সেটা পেশ করতে পারতেন ডিউকের সামনে।

ডিউকের কাছে নিজেই এলেন ওথেলো। সেই সাথে ব্রানশিও এলেন ওথেলোর বিরুদ্ধে ডিউকের কাছে নালিশ জানাতে। সাইপ্রাসের ধারে-পাশে আসার আগেই কীভাবে তুর্কি বাহিনীকে হঠানো যায় তা নিয়ে রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে ডিউক ও তার পারিষদরা যখন আলোচনায় রত, ঠিক সে সময় ওথেলোর বিরুদ্ধে তার মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাবার অভিযোগ ডিউকের কাছে পেশ করলেন ব্রানশিও।

মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন ডিউক। তুর্কি আক্রমণ রোখাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেনেটর হিসেবে ব্রাবানশিওর অভিযোগের গুরুত্বকে ছোট করে দেখাও তার পক্ষে সম্ভবপর নয়। অনেক ভেবে চিন্তে ডিউক এই সিদ্ধান্তে এলেন যে ব্রাবানশিওর অভিযোগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কাজে হাত দেওয়া তার পক্ষে ঠিক হবে না।

এরপর অন্যান্য সেনেটরদের সামনে ডিউকের কাছে ওথেলোর বিরুদ্ধে তার অভিযোগ শোনালেন ব্রাবানশিও। তিনি বললেন, ‘আফ্রিকার লোক হিসাবে ওথেলো নিশ্চয়ই জাদু ও তুকতাক জানে। বিধর্মী হয়েও এই জাদুবলের সাহায্যে সে ডেসডিমোনাকে বশ করে গোপনে বিয়ে করেছে তাকে। এ অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ ওথেলোর পক্ষে। আমি চাই আগে এ অপরাধের বিচার হোক।’

সেই সামন্ততান্ত্রিক যুগে ধনী-দরিদ্র সবার খুব বিশ্বাস ছিল তুকতাক ও জাদুমন্ত্রের উপর। তাই সেনেটের অনেকেই মেনে নিলেন যে সত্যি কথাই বলছেন ব্রাবানশিও। আর আফ্রিকা এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশ, শিক্ষা-সভ্যতার আলো পৌঁছায়নি সেখানে। সেখানকার লোকেরা ভূত প্রেতের পূজো করে, তুকতাক, জাদুমন্ত্র তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। ওথেলোর বাড়িও আফ্রিকার মরক্কোয়। কাজেই ও সব অপবিদ্যায় তার দখল থাকা মোটেই বিচিত্র নয়। নইলে কী করে বিশ্বাস করা যায় যে ডেসডিমোনার মত পরমাসুন্দরী এক মেয়ে কালো কুচ্ছিত মুরকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করবে! অথচ ডেসডিমোনাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেনি, এমন যুবক একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না ভেনিস শহরে, তাদের মধ্যে অনেকেই ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধতে চেয়েছিল তাকে। কিন্তু তাদের কাউকে পাত্তা দেয়নি ডেসডিমোনা।

রডরিগো সেই যুবকদের একজন যে ইয়াগোর সাথে ব্রাবানশিওর কাছে গিয়েছিল ওথেলোর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সবাই ধরে নিল যে তুকতাক করেই ডেসডিমোনার ভালোবাসা আদায় করেছেন ওথেলো আর তারপর তাকে বাধ্য করেছেন বিয়ে করতে।

সব কিছু শোনার পর ডিউক বললেন, ‘সেনাপতি ওথেলো, আপনার বিরুদ্ধে সেনেটার ব্রাবানশিও যে অভিযোগ করেছেন সে ব্যাপারে আপনার কি কিছু বক্তব্য আছে?’

‘এ ব্যাপারে শুধু একটা কথাই আমি বলতে চাই হুজুর যে বিভিন্ন যুদ্ধে আমার বীরত্বের কথা শুনেই ডেসডিমোনা আকৃষ্ট হয়েছে আমার প্রতি। আমার কথা সত্যি কিনা তা ডেসডিমোনাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন’ – বললেন ওথেলো।

বিচারকের আসনে বসা ডিউক যুক্তি খুঁজে পেলেন ওথেলোর কথার মাঝে। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই ওথেলো, আমরা বাধ্য ডেসডিমোনার বক্তব্য শুনতে। কে আছ, ডেসডিমোনাকে ডেকে নিয়ে এস এখানে।’

ডিউকের সেপাই তখনই রওনা হল ডেসডিমোনাকে নিয়ে আসতে। ইত্যবসরে উকিলের সাহায্য ছাড়াই আত্মপক্ষ সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলেন ওথেলো। এ ব্যাপারে তিনি যে নির্দোষ তা প্রমাণ করার জন্য তিনি ডিউক এবং সেনেটরদের সামনে ঘটনার আনুপূর্বিক যুক্তিগ্রাহ্য বিবরণ দিতে লাগলেন।

নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করার জন্য ওথেলো বলতে লাগলেন, মহামান্য ডিউক এবং মাননীয় সেনেটরদের কাছে আমার গোপন করার কিছু নেই। ডেসডিমোনার ভালোবাসা পাবার জন্য আমি তুকতাক বা ওই জাতীয় কোনও নীচ কাজের আশ্রয় নেইনি। শুধু এই নয়, আমি কোনও রকম চেষ্টাও করিনি ডেসডিমোনার ভালোবাসা পাবার। জরুরি কাজের জন্য একবার আমায় যেতে হয়েছিল সেনেটর ব্রাবানশিওর বাড়িতে। সেখানেই দেখা হয়েছিল ডেসডিমোনার সাথে। বহু যুদ্ধ জয় করে ভেনিসের প্রধান সেনাপতি হবার পর থেকেই সে আগ্রহী হয়ে ওঠে আমার সম্পকে। তার একটা কারণও অবশ্য ছিল --- জ্ঞান হবার পর থেকে বড়ো হবার সময় পর্যন্ত যে সব পুরুষ মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছে ডেসডিমোনা, চেহারার দিক দিয়ে আমি তাদের চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক। আমার জাতি, ধর্ম, চামড়ার রং, মুখের গড়ন, চুলের ধাঁচ -- সবকিছুই আর পাঁচজন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তার উপর ও জেনেছে যে আমি মরক্কোর লোক, যে দেশটা আফ্রিকার অন্তর্ভুক্ত। হুজুর, আফ্রিকার অধিকাংশই ঘন জঙ্গলে ভরা। বাঘ, সিংহ, হাতি, বাইসন, সাপ, নেকড়ে ---- এসব হিংস্র পশুরা অবাধে ঘুরে বেড়ায় সেখানে। এমন দেশ থেকে আসা একটা মানুষের প্রতি ডেসডিমোনার মতো যুবতি যে সহজেই আকৃষ্ট হবে তাতে আশ্চর্যের কি আছে? তাছাড়া ডেসডিমোনাকে আমি যখন দেখি, তখন সে যৌবনে পা দেওয়া এক কুমারী। সামাজিক বিধি-নিষেধ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা থাকা তো দূরের কথা, কোনও ধ্যান-ধারণাই গড়ে ওঠেনি তার মনে। আমার ধারণা, এসব কারণেই সে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল আমার জীবনের কথা শুনতে।

‘হুজুর, সৈনিক হলেও আমি একজন রক্তমাংসের মানুষ। ভালোবেসে যদি কেউ যুদ্ধের কাহিনি শুনতে চায় তাহলে তাকে বিমুখ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তাকে দিনের পর দিন শুনিয়েছি খুব ছোটবেলায় দেশ ছেড়ে ভেনিসে এসে কীভাবে আমি সৈনিকের বৃত্তি গ্রহণ করেছি, বিভিন্ন যুদ্ধ জয় করে কীভাবে আমি আজ ভেনিসের প্রধান সেনাপতি হয়েছি -- এসব বিভিন্ন ঘটনার কথা বলেছি তাকে। কর্মসূত্রে ওর বাবার কাছে যখনই গিয়েছি, কাজ শেষ হবার পর ডেসডিমোনা আমায় টেনে নিয়ে গেছে তার মহলে। বাচ্চা মেয়ের মতো বায়না ধরেছে গল্প শোনার। যুদ্ধের বর্ণনা শুনতে শুনত আমার প্রতি ভালোবাসার যে ছবি ওর দু-চোখে ফুটে উঠত, সেটা আমার নজর এড়ায়নি। হুজুর, বিধর্মী হয়েও আমি বলছি ডেসডিমোনার ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই ধন্য। কোনও তুকতাক বা জাদুমন্ত্র নয় হুজুর, আমর বীরত্বের কাহিনিগুলি একসময় আমারই অজান্তে জয় করেছে ডেসডিমোনার হৃদয়। হে মহামান্য ডিউক, নিজের নির্দোষিতার পক্ষে আমার আর কিছু বলার নেই।’

ওথেলোর বক্তব্য শেষ হবার সাথে সাথেই সেপাই সহ ডিউকের সামনে এসে হাজির হল ডেসডিমোনা।

গম্ভীর স্বরে তাকে প্রশ্ন করলেন ডিউক, ‘তুমিই ডেসডিমোনা?’

‘হ্যা, মহামান্য ডিউক,’ স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিল ডেসডিমোনা।

ডেসডিমোনার চোখের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ডিউক, আচ্ছা, সেনাপতি ওথেলো কি কখনও তোমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন?

‘না, মাননীয় ডিউক, একই ভাবে জবাব দিল ডেসডিমোনা, ‘সেনাপতি নন, বরং আমিই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম তাকে। সে প্রস্তাব গ্রহণ করে আমায় সম্মানিত করেছেন ওথেলো। একমাত্র আমার অনুরোধেই তার জীবনের রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলি শুনিয়েছে আমাকে। এ ছাড়া বিয়ের কোনও বাসনাও তিনি প্রকাশ করেননি আকার ইঙ্গিতে।

ডেসডিমোনার বক্তব্য শুনে সমবেত সেনেটররা সবাই একবাক্যে বললেন। ডেসডিমোনার সাক্ষোই প্রমাণ হল যে ওথেলো সম্পূর্ণ নির্দোয়। তারা প্রস্তাব দিলেন ওথেলোর উপর থেকে ব্রাবানশিওর অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে আসন্ন সংকটের মোকাবিলার দায়িত্ব দেওয়া হোক তাকে।

সেনেটরদের ইচ্ছায় সায় দিয়ে ওথেলোর বিরুদ্ধে আনা ব্রাবানশিওর অভিযোগ খারিজ করে দিলেন ডিউক। তুর্কি নৌবাহিনী যে সাইপ্রাস আক্রমণ করতে আসছে সে কথাও তিনি শুনিয়ে দিলেন ওথেলোকে। ওথেলোকে ডিউক আরও জানালেন যে সাইপ্রাস রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে তাকেই। ডিউকের কথা শুনে ওথেলো বললেন যে তিনি তৈরি আছেন যুদ্ধের জন্য।

এবার ওথেলোকে বললেন ডিউক, সেনাপতি ওথেলো, সাইপ্রাস দুর্গের সামগ্রিক অবস্থার খুটি-নাটি পর্যন্ত আপনার নখদর্পণে, সে কথা আমার অজানা নয়। সাইপ্রাসকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আপনার মধুচন্দ্রিমা হয়ত কিছুটা বিঘ্নিত হবে, সেজন্য আমি এবং সেনেটররা সবাই খুব দুঃখিত।

‘আমি কথা দিচ্ছি মহামান্য ডিউক, তুর্কি নৌবাহিনীকে সাইপ্রাসের আশে-পাশেও ঢুকতে দেব না,’ বললেন ওথেলো, ‘আমি এখনই যাচ্ছি। যাবার আগে অনুরোধ করছি আপনারা আমার স্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিন।’

‘এ আর এমন কি ব্যাপার?’ বললেন ডিউক, ইচ্ছে করলে আপনি অনায়াসেই স্ত্রীকে রেখে যেতে পারেন তার পিতা সেনেটর ব্রাবানশিওর কাছে।  ব্রাবানশিও বললেন, ‘আমায় মাফ করবেন মহামান্য ডিউক।’ ডেসডিমোনাকে আর আমার কাছে রাখা সম্ভব নয়।

‘আমিও তা চাই না,’ ব্রাবানশিওর মতে সায় দিয়ে বললেন ওথেলো।

ডেসডিমোনা বললেন, আমিও চাইনা বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার কাছে গিয়ে থাকতে। যাকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি, দয়া করে তার কাছাকাছি থাকার অনুমতি দিন আমায়।

‘মাননীয় ডিউক, আমারও ইচ্ছা তাই,’ বললেন ওথেলো। ডিউক বললেন ওথেলোকে, ‘বেশ, তাই হবে। আজ রাতেই আপনি রওনা হয়ে যান সাইপ্রাস অভিমুখে। যাবার আগে অধীনস্থ কোনও সেনানীকে দায়িত্ব দিন যাতে সে সাইপ্রাসে আপনার স্ত্রীকে পৌছে দেয়।’

সেনানী ইয়াগোর উপর ডেসডিমোনাকে নিরাপদে সাইপ্রাসে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব দিয়ে তুর্কি আক্রমণ রুখতে সেই রাতেই জাহাজ নিয়ে সাইপ্রাসের দিকে রওনা দিলেন ওথেলো।

সেনানী হিসেবে যতই দক্ষতা থাক না কেন ইয়াগোর, লোক হিসেবে সে ছিল এক নম্বরের বদমাশ। ওথেলো যখন ভেনিসের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন, সে সময় ইয়াগো চেষ্টা করেছিল তার প্রধান সহকারী হবার। কিন্তু তার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ওথেলো তার প্রধান সহকারী রূপে বেছে নেন ক্যাসিও নামে অপর একজন সেনানীকে। তবে ওথেলো একেবারে হতাশ করেননি ইয়াগোকে। তিনি তাকে বহাল করেন অধস্তন এক সেনানীর পদে। ইয়াগো মোটেও ভুলতে পারেনি সেই তিক্ত ঘটনার স্মৃতি। অনেক দিন থেকেই সে মনে মনে রাগ পুষে রেখেছে ওথেলোর উপর। বাইরে লোক দেখানো আনুগত্যের ভাব দেখালেও, সে দিন-রাত মাথা খাটিয়ে চলেছে কী ভাবে ওথেলোর চরম সর্বনাশ করা যায়। ডেসডিমোনাকে বিয়ে করবেন বলে যে রাতে ওথেলো তাকে তার বাবার বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যান, সে সময় ইয়াগোও ছিল তার সাথে, ইয়াগোর সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া ওথেলোর পক্ষে সম্ভব ছিল না ডেসডিমোনাকে বিয়ে করার। অথচ বিয়ের কিছুক্ষণ পরে এই ইয়াগোই সে সংবাদটা পৌছে দেন ডেসডিমোনার বাবা সেনেটর ব্রাবানশিওর কানে। এই ইয়াগোই সেনেটর ব্রাবানশিওকে পরামর্শ দিয়েছিল ডিউকের কাছে ওথেলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। সব শোনার পর ডিউক ওথেলোকে কঠোর সাজা দেবেন এটাই ছিল ইয়াগোর আশা।

এ কথা আগেই বলা হয়েছে যে ভেনিসের ধনী ব্যক্তিদের যে সব অপদার্থ ছেলেরা এতদিন ধরে স্বপ্ন দেখেছিল ডেসডিমোনাকে বিয়ে করার, রডরিগো তাদের অন্যতম। জাদুমন্ত্রে ডেসডিমোনাকে বশীভূত করে ওথেলো তাকে বিয়ে করেছে – এ খবরটা ব্রাবানশিওর কানে তুলে দিতে যে রাতে ইয়াগো তার কাছে গিয়েছিল, মজা দেখার জন্য সে সময় রডরিগোও ছিল তার সাথে। ডেসডিমোনার সাথে বিয়ে দেবার লোভ দেখিয়ে ইয়াগো প্রচুর টাকা হাতিয়েছে রডরিগোর মাথায় হাত বুলিয়ে। ডেসডিমোনা তাকে বিয়ে করতে রাজি না হলেও এতদিন আশায় আশায় থেকেছে রডরিগো। কিন্তু যখন শুনল ডেসডিমোনা বিয়ে করেছে ওথেলোকে, তখন নিরাশায় ভেঙে পড়ল সে।

 ইয়াগো দেখল এই সুযোগ, রডরিগোর মাথায় হাত বুলিয়ে আরও কিছু টাকা হাতাবার। সে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল, রডরিগো, মিছিমিছি ভেঙে পড়ছ তুমি। ডেসডিমোনার সাথে ওথেলোর বিয়ে হওয়ায় তোমার মন খারাপ করার কিছু নেই। আমি বলছি ওদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাটা একটা খেয়াল মাত্র। ওদের বিয়েটা বেশিদিন টিকবে না। একটু অপেক্ষা কর, ওদের ছাড়াছাড়ি হল বলে। দিনরাত এখন শুধু একটাই কাজ করতে হবে তোমায় - তা হল সাইপ্রাসে গিয়ে ডেসডিমোনার পিছনে লেগে থাকা। তার প্রতি তোমার ভালোবাসা যে অটুট, তারই খোঁজে যে তুমি সাইপ্রাসে এসেছে এটা ভালো করে বোঝাতে হবে ডেসডিমোনাকে। আর তার চোখে চোখ পড়লেই ইশারা, হাবেভাবে বুঝিয়ে দেবে যে এখনও তুমি ভালোবাস তাকে।

এতক্ষণ হাঁ করে একমনে ইয়াগোর কথা শুনছিল রডরিগো। এবার সে বল, আমায় তাহলে কী করতে হবে?

ইয়াগো বলল, কতদিন সাইপ্রাসে গিয়ে থাকতে হবে তা কে জানে। বিদেশ-বিভুই বলে কথা। কখন কী প্রয়োজন হয় তার ঠিক আছে। তাই যেখান থেকে সম্ভব টাকাকড়ির জোগাড় কর। ওখানে যাবার সময় সাথে করে বেশি টাকা নিয়ে যেতে ভুলো না। হাতে যদি টাকা না থাকে তবে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে টাকার জোগাড় কর। সেখানে গিয়ে ডেসডিমোনার সম্মতি আদায়ের জন্য হয়ত তাকে দামি উপহার দেবার প্রয়োজন হতে পারে। তখন তো প্রচুর টাকার দরকার হবে আর সে টাকা কে দেবে তোমায় ? কাজেই বেশি করে টাকা সাথে নিয়ে যেও।

‘তাই হবে’, মিনমিন করে রডরিগো সায় দিল ইয়াগোর কথায়।

যুদ্ধক্ষেত্রে তাক্বদির সর্বদাই সদয় ওথেলোর উপর। হয়তো সে জন্য এবারও বিনাযুদ্ধে জয় হল তার। সমুদ্রের ভিতর তুর্কি নৌবাহিনীকে আক্রমণ করার আগেই শুরু হল প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। সে ঝড়ের দাপটে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হল তুর্কি নৌবাহিনী --- সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র সহ তাদের বহু জাহাজ ডুবে গেল সাগরে অল্প যে কয়েকটি জাহাজ বেঁচে গেল, তারাও পাল ছিড়ে, মাস্তুল ভেঙে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ল দিশেহারা হয়ে। তুলনায় ভেনিসের নৌবাহিনীর জাহাজগুলির কিন্তু সেরূপ ক্ষতি হয়নি। ভেনিসের বিশাল নৌবাহিনীর সাথে নিরাপদে সাইপ্রাসের মাটিতে পা রাখলেন ওথেলো। ডাঙায় নেমেই শুনালেন তার অধীনস্থ সেনানী ইয়াগো অনেক আগেই পৌঁছে গেছেন ডেসডিমোনাকে সাথে নিয়ে।

একই সাথে গভর্নর এবং সামরিক প্রশাসক হয়ে সাইপ্রাসে এসেছেন ওথেলো। তাই পূর্ববর্তী গভর্নর মনট্যানো তার হাতে তুলে দিলেন শাসন ক্ষমতা। এরপর সাইপ্রাস দুর্গে গভর্নরের আবাসে এসে ওথেলো দেখা পেলেন তার স্ত্রী ডেসডিমোনার। আক্রমণ করতে এসে তুর্কি নৌবাহিনী নিজেরাই ধ্বংস হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠল সাইপ্রাসবাসীরা।

ওথেলো জানেন এখানকার মানুষের উৎসব মানেই আইন-কানুনের পরোয়া না করে রাতভর মদ গেলা। তাই সহকারী ক্যাসিওকে ডেকে বললেন তিনি, আমি খুব ক্লান্ত ক্যাসিও। এবার আমার প্রয়োজন বিশ্রামের। শহর সহ সমস্ত সাইপ্রাস দ্বীপের শান্তিরক্ষার দায়িত্ব তোমার উপর দিয়ে বিশ্রাম করতে চললাম আমি। রাত জেগে হলেও এবার তোমাকেই পুরো এলাকার শান্তি রক্ষা করতে হবে। কড়া নজর রাখবে যাতে কেউ দাঙ্গা-হাঙ্গামা না বাধায়।

ওথেলোকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ক্যাসিও, ‘আপনি নিশ্চিন্তে বিশ্রাম করতে যান সেনাপতি। সারারাত জেগে আমি কড়া নজর রাখৰ চারদিকে। ক্যাসিওর কথায় আশ্বস্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেন ওথেলো।’

আগেই বলা হয়েছে অনেকদিন থেকেই ইয়াগো সুযোগ খুঁজছিল ওথেলোর চরম সর্বনাশ করার। সুযোগ বুঝে এবার সে চেষ্টায় উদ্যোগী হল সে। ওথেলোর সহকারী ক্যাসিও যে খুবই খোলা মনের মানুষ, অবাধে মেলামেশা করেন সবার সাথে তা অজানা ছিল না ইয়াগোর। ক্যাসিও যে তাকে বিশ্বাস করেন, সে কথাও জানতেন ইয়াগো। ওথেলো বিশ্রাম নিতে যাবার পর তিনি বললেন ক্যাসিওকে, শহরের সবাই যখন এই আনন্দের দিনে ফুর্তিতে মেতে উঠেছে, তখন আমরাও এক আধটু ফুর্তি করলে তাতে বাধা কোথায়? আসুন, ওদের মতো আমরাও একটু মদ খেয়ে ফুর্তি করি। ইয়াগোর আসল মতলবের কথা জানতেন না ক্যাসিও, তাই ইয়াগোর প্রস্তাবে কোনও দোষ খুঁজে পেলেন না তিনি।

ইয়াগোর প্রস্তাবে সায় দিয়ে বললেন ক্যাসিও, বেশ তো, অল্প-স্বল্প খাওয়া যেতে পারে।

তার প্রস্তাবে ক্যাসিও রাজি আছেন শুনে শয়তান ইয়াগো মদ ঢালল দুটো পাত্রে। ইচ্ছে করে সে একটা পাত্রে বেশি মদ ঢালল আর সেটা রেখে দিল ক্যাসিওর সামনে। নিজের পাত্রে খুব সামান্যই মদ ঢালল ইয়াগো।।

ইয়াগোর মতলবটা তখনও পর্যন্ত ধরতে পারেননি ক্যাসিও। তাই কয়েক চুমৃকেই তিনি শেষ করে ফেললেন মদের পাত্র। সাথে সাথেই তার পাত্রে আরও মদ ঢালল ইয়াগো। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ক্যাসিও খালি করে দিলেন মদের পাত্র। ক্যাসিওর পাত্র খালি হতেই তাতে মদ ঢেলে দিতে লাগল ইয়াগো। এভাবে প্রচুর মদ খেয়ে নেশা ধরে গেল ক্যাসিওর। এ কথা তিনি ভুলেই গেলেন ওথেলো যে তাকে রাত্রিবেলায় শহরের শান্তি রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন। তবুও নেশায় টলতে টলতে প্রহরীদের কাজকর্মের তদারক করতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন তিনি। ক্যাসিও চলে যেতেই ইয়াগো দেখল তার পথ সাফ। কাছাকাছিই ছিল রডরিগো। সে তাকে বলল, দেখ, আমার উপরওয়ালা ক্যাসিও মদ খেয়ে বেহেড মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। প্রহরীদের কাজ-কর্মের তদারক করতে। তুমিও সুযোগের অপেক্ষায় থাক যাতে উনি ফিরে এলে তার সাথে এমন ঝগড়া বাঁধাবে যাতে উনি প্রচণ্ড রেগে যান তোমার উপর। তুমি কিন্তু একদম রাগ করবে না, ক্যাসিওকে এমনভাবে তাতিয়ে দেবে যাতে তিনি তলোয়ার বের করে আক্রমণ করেন তোমায়। তাতে হয়তো সামান্য চোট লাগতে পারে তোমার। তবে ক্যাসিও তেমন সুস্থ নেই। কাজেই চোট লাগার আগেই তুমি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বাঁচাতে পারবে। মনে রাখবে, তোমার মনোবাসনা পূর্ণ করতে হলে আমার কথামতোই চলতে হবে।

রডরিগো রাজি হয়ে গেল ক্যাসিওর কথায়। সে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল ক্যাসিওর ফিরে আসার জায়গায়। কিছুক্ষণ বাদে রডরিগো এবং ক্যাসিওর উত্তেজিত স্বরে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনে ইয়াগো বুঝতে পারল তার নির্দেশিত পথেই চলেছে রডরিগো। বাইরে বেরিয়ে এসে ইয়াগো দেখল তারা একে অন্যে তলোয়ার হাতে লড়াই করছে। রডরিগো চোট পেয়েছে, তার দেহের নানা জায়গা থেকে ঝরছে রক্ত। আঘাত পেয়ে রডরিগ যা মুখে আসে তাই বলে গালাগাল দিচ্ছে ক্যাসিওকে।

কাছেই ছিল সাইপ্রাসের প্রাক্তন গভর্নর মনট্যানোর বাড়ি। চিৎকার, চেঁচামেচি আর গালি গালাজের আওয়াজ শুনে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। রডরিগোকে আহত অবস্থায় দেখে তিনি তলোয়ার হাতে ঝাপিয়ে পড়লেন ক্যাসিওর উপর। ক্যাসিও তখন বেহেড মাতাল, এবার রডরিগোকে ছেড়ে তিনি চড়াও হলেন মনট্যানোর উপর। ক্যাসিওর তলোয়ারের আঘাতে বেশ ভালোমতন চোট পেলেন মনট্যানো। ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষা করছিল ইয়াগো। সে তৎক্ষণাৎ ভিতরে গিয়ে বাজিয়ে দিল পাগলাঘণ্টি। সাইপ্রাসবাসীরা চমকে উঠল সেই ঘণ্টার আওয়াজ শুনে হয়তো ভূমিকম্প, নয়তো প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি কিংবা বিদেশি শত্রুর আক্রমণ – সাধারণত এ সব কারণেই বেজে ওঠে পাগলা ঘন্টি। ভয় পেয়ে তারা বাইরে বেড়িয়ে এসে দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল।

পাগলাঘণ্টির আওয়াজ আর লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে গেল ওথেলোর। কী ব্যাপার ঘটেছে তা দেখতে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। দুর্গের কিছুটা দূরে রাস্তার উপর মনটানো আর রডরিগোকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলেন ওথেলো। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন তার সহকারী মাতাল অবস্থায় জখম করেছেন এদের দুজনকে।

বেহেড মাতাল হয়ে ক্যাসিও এমন কাজ করেছেন? কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি ওথেলো। শেষে ইয়াগোকে ডেকে আসল ঘটনা জানতে চাইলেন তিনি। সুযোগ পেয়ে ইয়াগো বলল যে মদ খেয়ে বেসামাল অবস্থায় মনটানো আর রডরিগোকে জখম করেছেন ক্যাসিও। কথাটা শুনে ওথেলো বেজায় রেগে গেলেন ক্যাসিওর উপর। তৎক্ষণাৎ তিনি ক্যাসিওকে পদচ্যুত করে সেই পদে বহাল করলেন ইয়াগোকে। এভাবেই বাস্তবে পরিণত হল শয়তান ইয়াগোর বদমতলব।

এভাবে পদচ্যুত হয়ে, খুবই দুঃখ পেলেন ক্যাসিও। কীভাবে এরূপ একটা ঘটনা তার জীবনে ঘটল তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। এভাবে মদ খেয়ে বেহেড মাতাল হবার মতো লোক মোটেই নন ক্যাসিও। কিন্তু জীবনের মধ্যভাগে এসে তিনি নেশা করে নিজের পায়ে কুড়োল মেরে বসলেন। একবারও তার মনে হল না যে তিনি ইয়াগোর চক্রান্তের শিকার হয়েছেন, এ ব্যাপারে নিজেকেই দায়ী করলেন তিনি।

তাকে সান্ত্বনা দিতে এল ইয়াগো। তার দুঃখে সহানুভূতি জানিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলার পর সে বলল তাকে, এ ব্যাপারে আপনি বরং গভর্নরের স্ত্রী ডেসডিমোনার শরণাপন্ন হোন। তিনি একটু বললেই এবারের মতো আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন ওথেলো, আপনি আবার নিজ পদে বহাল হতে পারবেন।

ক্যাসিওর মনে ধরল ইয়াগোর কথাটা। ডেসডিমোনাকে তিনি ভালো করেই চেনেন। বিয়ের আগে ওথেলো যখন ডেসডিমোনার কাছে যেতেন, তখন বহুবার তার সঙ্গী হয়ে গেছেন ক্যাসিও। ওথেলোর দূত হিসেবে বহুবার তিনি নানারূপ সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন ডেসডিমোনার কাছে।

আর দেরি না করে ক্যাসিও এসে হাজির হলেন ডেসডিমোনার কাছে, সব কথা খুলে বললেন তাকে। তারপর তিনি বললেন তাকে, একমাত্র আপনিই পারেন এই অপমান আর অসম্মানের হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে। দয়া করে বাঁচান আমায়।

 স্বামীর বিশ্বস্ত সহকারী ছাড়াও ক্যাসিওকে নিজেদের হিতাকাঙক্ষী বলে মনে করতেন ডেসডিমোনা। তার দুঃখের কথা শুনে সে নিজেও খুব দুঃখ পেল। ক্যাসিওকে আশ্বাস দিয়ে বলল ডেসডিমোনা, স্বামীকে বলে আমি আপনাকে উদ্ধার করব এই বিপদ থেকে।

 ওদিকে ওথেলোর ক্ষতি করার জন্য ফের মতলব আঁটছে ইয়াগো। ক্যাসিও ডেসডিমোনার কাছে গেছেন, হারানো পদ ফিরে পাবার জন্য গোপনে ধরাধরি করেছেন তাকে – এ খবরটা জানতে পেরে দুর্গের ভিতরে ঢুকে ওথেলোর সাথে দেখা করেছে ইয়াগো। যেন বিশেষ কাজ আছে এরূপ ভান করে ওথেলোকে কায়দা করে নিয়ে এলেন দুর্গের সেই অংশে যেখানে কথা বলছিলেন ক্যাসিও আর ডেসডিমোনা। তাদের দুজনকে একসাথে কথা বলতে দেখে ওথেলোকে শুনিয়ে বললেন ইয়াগো, না, না, এসব ঠিক হচ্ছে না। ছি ছি সবার চোখের আড়ালে.... না, মোটেই ভালো কথা নয়।

ইয়াগোর মন্তব্য কানে যেতেই ওথেলো বললেন, ‘কী বলতে চাইছ তুমি? ছি ছি ভালো কথা নয়, এসবের অর্থ কি?’

সাথে সাথেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল ইয়াগো, ও কিছু নয়। আমি ভাবছিলাম অন্য কথা? মুখে না বললেও ইয়াগো যে কিছু চেপে যাচ্ছে তা বুঝতে পারলেন ওথেলো। কিন্তু ব্যাপারটার জন্য পীড়াপীড়ি করলেন না তাকে।

 ওথেলো নিজেও খুব ভালোবাসতেন ক্যাসিওকে। তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না তার মতো একজন দায়িত্ববান লোক কীভাবে এরূপ গর্হিত কাজ করতে পারেন।

 যাইহোক, ডেসডিমোনার কথা শুনে ওথেলো ভেবে দেখলেন তার অপরাধের সাজা পেয়েছেন কাসিও। এবার মাফ করা যেতে পারে তাকে। ডেসডিমোনাকে বলে দিলেন ওথেলো যে এবারের মতো তিনি মাফ করছেন ক্যাসিওকে।

ডেসডিমোনার মাইনে করা সহচরী ছিল ইয়াগোর বউ এমিলিয়া। দুর্গে ওথেলো অনুপস্থিত পাকলে ডেসডিমোনাকে সঙ্গ দেওয়া আর তাকে নানা কাজে সাহায্য করাই ছিল এমিলিয়ার কাজ। এমিলিয়ার মুখে ইয়াগো শুনতে পেলেন যে ডেসডিমোনার অনুরোধে ক্যাসিওর সব দোষ মাফ করে তাকে পূর্বপদে বহাল করতে রাজি হয়েছেন ওথেলো। কথাটা শুনে নতুন করে বদবুদ্ধি চাপল ইয়াপোর মাথায়। সে ভাবতে লাগল কীভাবে ওথেলোর ক্ষতি করা যায়।

নিজ মতলব হাসিল করার জন্য ইয়াগো নানাভাবে কাজে লাগায় তার স্ত্রীকে। কারও ঘরের খবর আনা, এমন কি দামি জিনিস হাতিয়ে আনা, এ সব কাজ ইয়াগো তার স্ত্রী এমিলিয়াকে দিয়েই করায়। এসব কাজ এমিলিয়া করতে না চাইলে তাকে বেধড়ক পেটায় ইয়াগো। চাবুক দিয়ে মেরে গায়ের ছাল ছাড়িয়ে নেয় তার।

ওথেলো তার বিয়ের আগে বাহারি নকশা করা একটা সুন্দর রুমাল উপহার দিয়েছিলেন ডেসডিমোনাকে। মিশরের এক বেদেনীর কাছ থেকে রুমালটা জোগাড় করেছিলেন ওথেলোর বাবা। তিনি তার স্ত্রী অর্থাৎ ওথেলোর মাকে বলেছিলেন যে রুমালের ওই নক্সার মধ্যে জাদুশক্তি আছে। রুমালটা তার মাকে উপহার দিয়ে বাবা বলেছিলেন যতদিন এই রুমালটা তার কাছে থাকবে ততদিন অটুট থাকবে তাদের ভালোবাসা। স্বামীর দেওয়া ওই রুমাল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন তার মা। মৃত্যুকালে তিনি ওই রুমাল ওথেলোর হাতে দিয়ে বলেন সে যেন তার স্ত্রীকে সেটা উপহার দেয়। মায়ের নির্দেশে বিয়ের পর ওথেলো সেই রুমাল উপহার দেন ডেসডিমোনাকে। আর বলেছিলেন সে যেন সাবধানে রাখে রুমালটিকে।

এ খবর জানা ছিল ইয়াগোর। সে স্ত্রীকে চাপ দিতে লাগল যেন সে ওই রুমালটা এনে তাকে দেয়।।

স্বামীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না করলে তাকে যে বেধড়ক মার খেতে হবে তা ভালোই জানা ছিল এমিলিয়ার। ডেসডিমোনার অলক্ষ্যে একদিন সে রুমালটা চুরি করে এনে দিল তার স্বামী ইয়াগোর হাতে। আগে থেকেই নিজের মতলবটা ঠিক করে রেখেছিল ইয়াগো। চুপি চুপি সে রুমালটা রেখে এল ক্যাসিওর ঘরে।।

বাইরে থেকে এসে ঘরে ঢোকার পর রুমালটা চোখে পড়ল ক্যাসিওর। রুমালটা যে ডেসডিমোনার, ইয়াগোর মত সেটা জানা ছিল না ক্যাসিওর। তিনি ভাবলেন তার কোনো বন্ধু বেড়াতে এসে ভুল করে ফেলে গেছেন সেটা, পরে কোনওদিন এসে ফেরত নিয়ে যাবেন।

সাইপ্রাসে এসে ক্যাসিও প্রেমে পড়েছেন এক সুন্দরী বারবণিতার, নাম রিয়াংকা। রুমালের নকশাগুলি দেখে রিয়াংকার কথা মনে হল ক্যাসিওর। তার খুবই পছন্দ হয়েছে রুমালের সেলাইকরা নকশাগুলি। তিনি ঠিক করলেন রুমালের আসল মালিক ফিরে আসার আগেই তিনি রিয়াংকাকে দিয়ে হুবহু ওরুপ একটি রুমাল তৈরি করিয়ে নেবেন। সেদিনই রুমালটা রিয়াংকার কাছে নিয়ে গেলেন ক্যাসিও। তাকে বললেন, ‘হুবহু এরূপ একটা রুমাল তুমি তৈরি করে দেবে আমায়। রিয়াংকা কথা দিলেন তিনি তা করে দেবেন। এদিকে কাসিওর অজান্তেই তার গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য লোক লাগিয়েছেন ইয়াগো। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আগে-ভাগেই জেনে নিচ্ছেন ক্যাসিও কখন কোথায় যায়, কার সাথে কথা বলে।

ক্যাসিওর সাথে রিয়াংকার গোপন সম্পর্কের কথা অজানা নেই ইয়াগোর। ডেসডিমোনার রুমালটা যে ক্যাসিওই দিয়েছেন রিয়াংকাকে, সে খবরও চরের মুখে জানতে পেরেছেন ইয়াগো। তারপর একদিন তিনি বললেন ওথেলোকে, ‘সেনাপতি, আপনার হাতে সেদিন একটা সুন্দর রুমাল দেখেছিলাম যাতে চমৎকার সেলাইয়ের নকশা ছিল।

সায় দিয়ে ওথেলো বললেন, ‘ঠিকই দেখেছ তুমি। ওটা আমার মার রুমাল, বাবা দিয়েছিলেন মাকে। মিশরের এক বেদেনীর কাছ থেকে ওটা সংগ্রহ করেছিলেন আমার বাবা।

ওথেলোর কথা শুনে অবাক হবার ভান করে দু-চোখ উপরে তুলে বলল ইয়াগো, সে কি? ওই রুমাল তো ক্যাসিও দিয়েছেন তার প্রেমিকা রিয়াংকাকে।

ইয়াগোর কথা শুনে ওথেলো নিজেও আশ্চর্য হয়ে গেলেন, বললেন, ‘কী বলছ তুমি? রুমালটা ক্যাসিও দিয়েছেন তার প্রেমিকাকে? কিন্তু তিনি রুমালটা পেলেন কোথায় ?

মুখে না বললেও হাব-ভাবে, আকারে-ইঙ্গিতে ইয়াগো বোঝাতে চাইলেন ওথেলোকে যে ডেসডিমোনাই রুমালটা দিয়েছেন ক্যাসিওকে। কিন্তু ইঙ্গিতটা ধরতে পারলেন না ওথেলো। খোলাখুলিই বললেন, ‘ডেসডিমোনা কেন ওর রুমালটা ক্যাসিওকে দেবে? ভালোবাসার উপহার হিসেবেই আমি তাকে দিয়েছিলাম ওটা।

 মুখ টিপে হেসে বলল ইয়াগো, তা হোক না কেন হয়তো ভালোবাসার উপহার স্বরূপ ডেসডিমোনা ওটা দিয়েছেন ক্যাসিওকে।

‘কী বলছ তুমি?’ রাগে জ্বলে উঠল ওথেলোর দু-চোখ, দাঁতে দাঁত চেপে কোমরে আঁটা ছোরার হাতলটা চেপে ধরলেন তিনি। ডেসডিমোনার উপর ওথেলো বেজায় রেগে গেছেন একথা আঁচ করে মনে মনে বেজায় খুশি হল ইয়াগো। তার মতলব হাসিল হবার পথে, ডেসডিমোনার ব্যাপারে ওথেলোর মনে সন্দেহ জাগাতে পেরেছেন তিনি। এবার সাহসে ভর করে আর একটু অগ্রসর হল ইয়াগো। ডেসডিমোনা ক্যাসিওকে ভালোবাসে আর দু-জনের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে — একথাই জোর গলায় ওথেলোকে বোঝাতে চাইল ইয়াগো। ওথেলোর মনে পড়ে গেল ক্যাসিওর অপরাধ মাফ করে তাকে স্বপদে বসানোর অনুরোধ ডেসডিমোনাই করেছিল তাকে। ওথেলো ধরেই নিলেন ডেসডিমোনা ভালোবাসে ক্যাসিওকে আর সেজন্যই সে তাকে ওরূপ অনুরোধ করেছিল।

 ওথেলোর মন ভেঙে গিয়েছে বুঝতে পেরে ইয়াগো বলতে লাগল, বৃথাই আপনি মন খারাপ করছেন সেনাপতি। আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা স্বাভাবিক। কোনও নারীর পক্ষে সম্ভব নয় চিরকাল একজন পুরুষকে ভালোবাসা। তাছাড়া ক্যাসিও আপনার চেয়ে কমবয়সি, দেখতেও সে আপনার চেয়ে বেশি সুন্দর। সেক্ষেত্রে ক্যাসিওর প্রতি ডেসডিমোনার দুর্বলতা খুবই স্বাভাবিক।

ইয়াগোর মতো নিচু মনের লোকের কথা বিশ্বাস করতে মন চাইছে না ওথেলোর, তবুও বয়ে যাওয়া ঘটনার স্রোত একে একে ভেসে এল তার সামনে। ডেসডিমোন যে একজন অসতী, নষ্ট চরিত্রের মেয়ে---- এ ধারণাই গড়ে উঠল তার মনে। তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগে ক্যাসিওই ছিল ডেসডিমোনার গুপ্ত প্রেমিক, সবার অলক্ষ্যে তারা একে অপরকে ভালোবাসতেন। ওথেলোর সাথে ডেসডিমোনার বিয়ে হলে তাদের গোপন প্রেমের সম্পর্ক বজায় থাকবে। দুজনে কাছাকাছি থাকতে পারবে —- সে উদ্দেশ্যেই তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী সেজেছিলেন ক্যাসিও, এ কথাই ধরে নিলেন ওথেলো। নইলে তার দেওয়া প্রেমের উপহার কীভাবে ডেসডিমোনা দিল ক্যাসিওকে? তাছাড়া একটা গুরুতর অপরাধের দরুন তিনি ক্যাসিওকে বরখাস্ত করেছেন তার সহকারীর পদ থেকে। তারপর তাকে স্বপদে বহাল করার জন্য কেনই বা তাকে অনুরোধ করেছেন ডেসডিমোনা। ওথেলোর মনে কোনও সন্দেহ নেই ক্যাসিওর প্রতি ভালোবাসার টানেই এ কাজ করেছে ডেসডিমোনা? এ সব কথা ভাবতে ভাবতে গরম হয়ে উঠল ওথেলোর মাথা।

এরপর আবার একবার এল ডেসডিমোনা। কিছু না বুঝেই সে তার স্বামীকে অনুরোধ করল ক্যাসিওকে পূর্ব পদে রাখার জন্য। ডেসডিমোনার কথা শুনে যারপরনাই রেগে উঠলেন ওথেলো। সবার সামনে তিনি ডেসডিমোনাকে অসতী, নষ্ট মেয়েমানুষ বলে গালি-গালাজ করতে লাগলেন। বেজায় মারও দিলেন তাকে। ডেসডিমোনা স্বপ্নেও ভাবেনি কদিন আগে যিনি তাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছেন, আজ তারই হাতে তাকে মার খেতে হল। সে ওথেলোর কাছে জানতে চাইল কোন অপরাধে তিনি তার সাথে এরূপ ব্যবহার করছেন। তাকে মারতে মারতেই জবাব দিলেন ওথেলো ‘বল, কেন হারিয়েছিস আমার মায়ের দেওয়া রুমাল? ভালো চাস তো বলে দে কোন নাগরকে দিয়েছিস রুমালটা? নইলে তোর কপালে অশেষ দুর্ভোগ আছে সে কথাটা মনে রাখিস।’

কাঁদতে কাঁদতে জানতে চাইল ডেসডিমোনা, তুমি কি আমায় ভালোবাস না? আগে তো কখনও এরূপ ব্যবহার করনি আমার সাথে? তুমি কি পার না আগের মতো আমায় ভালোবাসতে?

গলা চড়িয়ে বললেন ওথেলো, ‘না, পারি না। আমার ভালোবাসা যদি পেতে চাও তাহলে রুমালটা এনে আমাকে দেখাও। তবেই আমি আগের মতো তোমায় ভালোবাসতে পারব, নইলে নয়। আমার শেষকথা তোমায় বলে দিলাম।’  

ওথেলোর হাতে বেজায় মার খাওয়া এবং তার মুখ থেকে এরূপ কুৎসিত গালাগাল শুনে বেদনায় যেন বোবা হয়ে গেল ডেসডিমোনা। সামান্য একটা রুমাল হারানো যে ওথেলোর কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবেনি ডেসডিমোনা। সে নিজেও জানে না কোথায় কী করে হারিয়ে গেল সেই রুমাল। তবে কি কেউ সেটা চুরি করেছে? এরূপ নানা প্রশ্ন উঠল তার মনে হতভাগিনী ডেসডিমোনা মাথা ঘামিয়েও জবাব পেল না এ প্রশ্নের।

এরই মাঝে একদিন রডরিগো এসে সরাসরি বলল ইয়াগোকে, কদূর এগুলো আমার কাজ? শুরু থেকেই তো আপনি আমায় আশ্বাস দিয়ে আসছেন আর অপেক্ষা করতে বলছেন সবুরে মেওয়া ফলে বলে। ডেসডিমোনাকে পাবার জন্য আমায় অনেক দামি দামি উপহার দিতে হবে। এ কথা আপনি হামেশাই বলেছেন। আপনার কথায় বিশ্বাস করে প্রচুর টাকা, হিরে-জহরত আর দামি অলংকার তুলে দিয়েছি আপনার হাতে। আপনি আমায় এও জানিয়েছেন সে সৱ উপহার হাসিমুখেই গ্রহণ করেছে ডেসডিমোনা। তবু আমি একবারও যাচাই করে দেখিনি আপনার কথার সত্যতা।

ডেসডিমোনার কাছে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখিনি সত্যিই সে আমার দেওয়া উপহার সাদরে গ্রহণ করেছে কিনা। আপনার কথা সত্যি হলে এর প্রতিদানে ডেসডিমোনা আমার প্রতি কিছুটা অনুগ্রহ দেখাবে, এটাই তো আশা করব আমি। আপনি বলছেন আমার দেওয়া উপহারগুলি সে সাদরে গ্রহণ করছে, অথচ তার সাথে দেখা হলে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আমার প্রতি কোনও আগ্রহ তার নেই। বেশ বুঝতে পারছি আপনি ঠকিয়েছেন আমায়। যদি ভালো চান তো আমার টাকা। কড়ি, গয়নাগাটি সব ফেরত দিন, নচেৎ এমন ব্যবস্থা করুন যাতে ডেসডিমোনা আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়, ভালোবাসে আমাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর ব্যবস্থা করুন, নইলে তার ফল ভালো হবে না সে কথা আগে-ভাগেই বলে দিলুম আপনাকে।

রডরিগোর কথা শুনে বেজায় দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেল ইয়াগো। ডেসডিমোনাকে পেতে হলে তাকে দামি দামি উপহার দিতে হবে – এতদিন ধরে তাকে এ গপপো শুনিয়ে প্রচুর টাকা তার কাছ থেকে হাতিয়েছে ইয়াগো। রডরিগোর কথা শুনে বোঝা গেল এ ব্যাপারে সে সরাসরি সন্দেহ করছে ইয়াগোকে। সে স্পষ্ট বুঝতে পারল রডরিগোকে শোষণ করার এ খেলাটা এবার থামাতেই হবে তাকে, নইলে রডরিগো হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাবে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া শুধু রডরিগো নয়, ক্যাসিওর দিক থেকেও যে কোনও সময় বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। ওথেলো যদি ক্যাসিওকে জিজ্ঞেস করেন ডেসডিমোনা সত্যিই তাকে রুমাল উপহার দিয়েছে কিনা, তখন ক্যাসিও বলবেন, না, ডেসডিমোনা নয়, অন্য কেউ এসে রুমালটা রেখেছিল তার ঘরে। সে ব্যাপারে ওথেলো যদি সত্যিই খোঁজ-খবর নেন, তখনই ফাঁস হয়ে যাবে সব কথা ভেস্তে যাবে তার মতলব। ইয়াগো ভেবে ভেবে স্থির করল এবার থেকে সাবধানে এগুতে হবে তাকে, নইলে নিজের চক্রান্তজালে জড়িয়ে পড়বে সে। সব দিক ভেবে সে স্থির করল বাঁচতে হলে তাকে প্রথমেই হত্যা করতে হবে ক্যাসিওকে এবং সে কাজের জন্য রডরিগোই উপযুক্ত লোক।

 ইয়াগো গোপনে দেখা করল রডরিগোর সাথে। সে তাকে বলল যে তার দেওয়া উপহার গুলি ডেসডিমোনা নিয়েছেন ঠিকই, তবুও তার অদ্ভুত এক মোহ রয়েছে ক্যাসিওর প্রতি। ইয়াগো রডরিগোকে আরও বোঝাল পথের কাঁটা ক্যাসিওকে খতম করতে না পারলে কোনও আশাই নেই রডরিগোর। ইয়াগোর কথায় রডরিগো রাজি হয়ে গেল ক্যাসিওকে খতম করতে। এর কিছুদিন পরে একদিন রাতের অন্ধকারে রাস্তার মাঝখানে তলোয়ার হাতে রডরিগো ঝাপিয়ে পড়লেন ক্যাসিওর উপর। কিন্তু রডরিগোর দুর্ভাগ্য, সামান্য চোট পেলেন ক্যাসিও। নিজের তলোয়ার দিয়ে তিনি পালটা আঘাত হানলেন রডরিগোর উপর। ক্যাসিওর আঘাত সামলাতে না পেরে টাল খেয়ে রাস্তার উপর পড়ে গেল রডরিগো। আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল ইয়াগো। আঘাত পেয়ে রডরিগো রাস্তায় পড়ে যেতে সে আর ঝুঁকি না নিয়ে লোকজন আসার আগেই ছুটে এসে রডরিগোর বুকে সজোরে বসিয়ে দিল তার তলোয়ার। কিছুক্ষণ বাদে স্থানীয় লোকেরা হাজির হল সেখানে, ধরাধরি করে তারা ক্যাসিওকে বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিল। অবশ্য তার আগেই গা ঢাকা দিল ধূর্ত ইয়াগো।

এদিকে ভেনিসের ডিউকের এক বিশেষ বার্তা বহন করে সাইপ্রাসে এসে হাজির হলেন লোডোভিকো আর গ্র্যাশিয়ানো নামে ভেনিসের দুজন সেনেটর। তার জানালেন মৌরিটানিয়া প্রদেশে অশান্তি শুরু হবার দরুন ওথেলোকে সে প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্বভার নেবার নির্দেশ দিয়েছেন ডিউক। আর ওথেলোর অনুপস্থিতে সাইপ্রাসের গভর্নরের দায়িত্ব পাবেন তার সুযোগ্য সহকারী ক্যাসিও কিন্তু ওথেলো যে ইতিমধ্যে গুরুতর অপরাধের শাস্তিস্বরূপ ক্যাসিওকে পদচ্যুত করেছেন সে খবর ডিউকের কানে পৌঁছায়নি।

ভেনিসের ডিউকের নির্দেশ পেয়ে মোটেও খুশি হলেন না ওথেলো। তাকে মরিটানিয়ায় যেতে হবে আর সাইপ্রাসের শাসনভার থাকবে ক্যাসিওর হাতে। তাহলে ডেসডিমোনার কী হবে? বাইরে যাবার আগে তার দায়িত্বও কি ক্যাসিওকে দিয়ে যেতে হবে? এ প্রশ্ন ওথেলোর মনে এলেও এর উত্তর তিনি জানেন না। ডেসডিমোনা যে ক্যাসিওর প্রতি আসক্ত তা ধরেই নিয়েছেন তিনি। তার সাথে ডেসডিমোনাকে মরিটানিয়ায় নিয়ে যাবার কথা বললে সে নিশ্চয়ই তাতে রাজি হবে না।

তিনি স্থির করলেন দূরে যাবার ব্যাপারে ইয়াগোর সাথে পরে পরামর্শ করে নেবেন। কথায় কথায় ডেসডিমোনার নাম উঠলে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন ওথেলো। এমন কি ইয়াগোর সামনে মন্তব্যও করে বললেন, যাবার আগে আমি হত্যা করব ডেসডিমোনাকে – ক্যাসিওর জন্য বাঁচিয়ে রাখব না তাকে।

 ডেসডিমোনার মৃত্যু হলে ইয়াগোও বেঁচে যায় আর সেই সাথে রক্ষা হয় সবদিক। কাজেই ওথেলোর কথায় সায় দিয়ে বললেন ইয়াগো, আপনি ঠিকই বলেছেন সেনাপতি, ডেসডিমোনাকে হত্যা করুন আপনি। তবে অস্ত্র দিয়ে নয়, এমনভাবে তাকে গলা টিপে মারুন যাতে কেউ বুঝতে না পারে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। ইয়াগোর কথা শুনে প্রেরণা পেলেন ওথেলো।

তখন গভীর রাত। বিয়ের কনের পোশাক পরে বিছানায় শুয়ে আছে ডেসডিমোনা! বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ঘুমোতে পারছে না সে। তার দু-চোখের পাতায় জমে থাকা ঘুমকে বারবার দূরে ঠেলে দিচ্ছে একরাশ অজানা ভয়। ইচ্ছে করেই বিয়ের পোশাক পড়েছে ডেসডিমোনা। তার আশা বিয়ের পোশাক পরনে দেখলেই তার প্রতি হারানো বিশ্বাস আবার ফিরে পাবেন ওথেলো।

এমিলিয়াকে বিদায় দিয়ে তিনি দু-চোখ বুজে অপেক্ষা করতে লাগলেন ওথেলোর জন্য।

কিছুক্ষণ বাদে পা টিপে টিপে ওথেলো শোবার ঘরে ঢুকলেন। ডেসডিমোনার দিকে তাকাতেই হারানো প্রেম-ভালোবাসার সুখ-স্মৃতি তার অবুঝ মনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল জলস্রোতের মতো। হাঁটু গেড়ে তার স্ত্রীর খাটের পাশে বসলেন ওথেলো। পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলেন ডেসডিমোনার ঠোটে, গলায় আর কপালে। সে চুম্বনের পরশে জেগে উঠল ডেসডিমোনা। চোখ খুলে দেখতে পেল চুম্বনে চুম্বনে তাকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন ওথেলো।

চাপা স্বরে ডেসডিমোনা বলল, ‘প্রিয়তম, উঠে এস!’

স্ত্রীর কথা শুনেই আবার পর মুহূর্তে ইস্পাতের মত কঠোর হয়ে উঠলেন ওথেলো। বললেন, ‘আমি তোমায় হত্যা করতে এসেছি ডেসডিমোনা।’

ওথেলোর কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইল না ডেসডিমোনা। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে সে বুঝতে পারল ওথেলো সতিই তাকে হত্যা করতে এসেছেন। সম্মুখে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে কাতর মিনতি করে সে বলল, ‘ওগো, তুমি আমায় হত্যা করো না। আমি অসতী নই।’

কিন্তু সে মিনতিতে গলল না ওথেলোর মন। খাটের উপর উঠে দু-হাতে ডেসডিমোনার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করলেন তাকে।

কিছুক্ষণ বাদে বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা দিল এমিলিয়া। ওথেলো দরজা খুলে দেবার পর ঘরে ঢুকল এমিলিয়া, লোডোভিকো, মনট্যানো এবং চেয়ারে বসা আহত ক্যাসিও – সেই সাথে ইয়াগোকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছেন তারা। ইয়াগোর সব চক্রান্তই ফাস হয়ে গেছে। ডেসডিমোনাকে মৃত দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল এমিলিয়া। সবার সামনে ওথেলো স্বীকার করলেন যে তিনিই গলা টিপে মেরে ফেলেছেন ডেসডিমোনাকে। এ সময় কিছুক্ষণের জন্যে জ্ঞান ফিরে এল ডেসডিমোনার। ওথেলো তাকে হত্যা করেননি, তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন – সবার সামনে এ কথা বলে চিরদিনের মতো নীরব হয়ে গেলেন তিনি। ওথেলো এবং উপস্থিত সেনেটরদের সামনে এমিলিয়া জানাল যে সে তার স্বামী ইয়াগোর নির্দেশেই ডেসডিমোনার রুমাল চুরি করে ক্যাসিওর ঘরে রেখে এসেছে। রুমাল চুরির চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যাওয়ায় খেপে উঠল ইয়াগো। সবার সামনে ছুরি বের করে সে তা বসিয়ে দিল স্ত্রী এমিলিয়ার বুকে।

এমিলিয়ার কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পেরে খুবই অনুতপ্ত হলেন ওথেলো। ডেসডিমোনার মৃতদেহের সামনে নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে আত্মহত্যা করলেন ওথেলো।

সেনেটর লোডোভিগো তার সঙ্গী গ্র্যাশিয়াননাকে নির্দেশ দিলেন যে যেন ওথেলোর বিষয় সম্পত্তির দেখাশোনা করে। সেই সাথে ডিউকের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ক্যাসিওকে দায়িত্ব দিলেন ইয়াগোর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার।

COMMENTS

Name

Andrew Marvell,3,Chinua Achebe,1,Edmund Spenser,2,Geoffrey Chaucer,2,George Herbert,3,Honours 1st Year,4,Honours 3rd Year,11,John Donne,9,John Milton,2,Life and Work,9,Masters,8,Robert Herrick,2,William Shakespeare,6,
ltr
item
TranslationBD: The Tragedy of Othello by William Shakespeare। Bangla Summary । TranslationBD । সম্পূর্ণ বাংলায়
The Tragedy of Othello by William Shakespeare। Bangla Summary । TranslationBD । সম্পূর্ণ বাংলায়
Othello - The Tragedy of Othello, the Moor of Venice – William Shakespeare – Summary in Bengali, TranslationBD.com সম্পূর্ণ বাংলায়, with PDF
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgribSo8lMdGqSIRjU31vWx-L1yoRjqNRQHrhhYBjL40-uiLp2V91cZYaCWLm5i6eQZ9enkKMPxm16b9V5175DRSqA2ka6VnLI7Gc4QN4l3Kj-7nvCvnzVIGtu8xE9cg_Z0Lcp4fSM6ECJIt9sWzF91W28f6cDf88rDXo1i4OnQc6ZCOpCL4LtS0EFHzg=w640-h366
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgribSo8lMdGqSIRjU31vWx-L1yoRjqNRQHrhhYBjL40-uiLp2V91cZYaCWLm5i6eQZ9enkKMPxm16b9V5175DRSqA2ka6VnLI7Gc4QN4l3Kj-7nvCvnzVIGtu8xE9cg_Z0Lcp4fSM6ECJIt9sWzF91W28f6cDf88rDXo1i4OnQc6ZCOpCL4LtS0EFHzg=s72-w640-c-h366
TranslationBD
https://www.translationbd.com/2021/11/the-tragedy-of-othello-bangla-summery.html
https://www.translationbd.com/
https://www.translationbd.com/
https://www.translationbd.com/2021/11/the-tragedy-of-othello-bangla-summery.html
true
875024856788546371
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content